চুয়াডাঙ্গায় বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, হাসপাতালে বেড সংকট।

Date: 2024-12-13
news-banner
একদিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা কমেছে ৪ ডিগ্রি। হিমেল বাতাসের দাপটে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। হাড় কাঁপানো শীত ও হালকা কুয়াশার সঙ্গে হিমশীতল বাতাসে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রমিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এরই মধ্যে জেলায় ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে হাসপাতালে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। ৪ ডিসেম্বর থেকে টানা ৯ দিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, আগামীকাল (আজ শুক্রবার) তাপমাত্রা আরও ১ ডিগ্রি কমে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। শীতের এই তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সীরা। শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় রোগীর ভিড়। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীরা আসছে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে। একই সঙ্গে বাড়ছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও সুস্থ থাকার পরামর্শ দিচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড সংকটে রোগীদের মেঝেতে অবস্থান করে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। তবে এখানে রোগি স্বজনদের অভিযোগ, ময়লা আবর্জনা আর দুর্গন্ধে গোটা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগি ও স্বজনদের অনেকটা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। গতকাল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগি ভর্তি ছিল ১৮ জন। গত এক সপ্তাহে মোট ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৪৫ জন। অথচ এই ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা মাত্র ৫ টি। যেখানে রোগি ভর্তি রয়েছে ৪০ জন পর্যন্ত। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় রোগি ও স্বজনদের অনেকটা চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটেছে। বেডের বিপরীতে রোগী বাড়াতে মেঝেতে অবস্থান করেছে রোগী স্বজনরা।
অপরদিকে কম বেশি করে আসতে শুরু করেছে ঠান্ডা জনিত নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু রোগি। আউটডোর ও ইনডোরে প্রতিদিনই শিশু রোগিদের চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মোট রোগি ভর্তি ছিল ৫২ জন। যেখানে এই ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ২২ টি ও কেবিন আছে ২ টি।
এক রোগির স্বজন সাথি খাতুন বলেন, হঠাৎ করে ঠান্ডায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু রোগী বাড়ছে। গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের থাকা এক রোগির স্বজন শিমুল হোসেন বলেন, শীতের কারণে বাড়ছে ডায়রিয়া। বেড না থাকায় নোংরা আর দুর্গন্ধ পরিবেশে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে যা খুবই অস্বস্তিকর। ডাক্তার-নার্সরাও চেষ্টা করছে পরিস্থিতি সামাল দিতে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. মাহবুবর রহমান মিলন বলেন, শীতজনিত কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগি বেশি। বিশেষ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন বয়সীরা। শিশুরা রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে পর্যাপ্ত মেডিসিন সরবরাহ আছে ও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে।
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে কোনো মতেই শিশুদের বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। শিশুদের প্রতি বেশি যত্ন নিতে হবে। বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মোটা কাপড় পরিধান করাতে হবে। রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

Leave Your Comments

Trending News